অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশে অপুষ্টির শিকার শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে এ রমজানে একটি বড় আকারের প্রচারাভিযান শুরু করছে ইউনিসেফ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তহবিল সংগ্রহের এ প্রচারাভিযানের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান সচ্ছল মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা নিজ দেশের শিশুদের অনুদান দিতে সক্ষম, তাদের প্রতি আবেদন জানানো হয়েছে।
বুধবার (২২ মার্চ) জাতিসংঘ শিশুবিষয়ক তহবিলের (ইউনিসেফ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, একটি শক্তিশালী অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করে এবং ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। একই সঙ্গে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সাফল্যের অর্থ হলো বাংলাদেশে বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা কমে যাওয়া।
ইউনিসেফের প্রচারাভিযানের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়টি আমাদের জনসংখ্যার সুবিধাবঞ্চিত অংশের যত্ন নেওয়া এবং কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের সাফল্য শিশুদের মাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়া দরকার, যারা আমাদের ভবিষ্যত এবং যারা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সুস্থতার জন্য ওপর নির্ভর করে।’
ইউনিসেফের তহবিল সম্পূর্ণভাবে স্বেচ্ছায় দানের ওপর নির্ভরশীল। সংস্থাটি বাংলাদেশে ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিশুদের জীবন বাঁচাতে ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছে। বিশ্বব্যাপী ইউনিসেফ অন্য যেকোনো মানবিক সংস্থার চেয়ে বেশি সংখ্যক শিশুর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে।
রমজানে দেশজুড়ে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য ইউনিসেফের তহবিল সংগ্রহের এ প্রচারাভিযান দেশের মানুষের ভালো কাজগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে প্রথম আহ্বান।
অপুষ্টির সবচেয়ে সাধারণ ধরন হল ‘স্ট্যান্টিং’ বা খর্বাকৃতির (বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা) হওয়া অথবা ‘ওয়েস্টিং’ বা শীর্ণকায় (উচ্চতার তুলনায় কম ওজন) হয়ে যাওয়া। অপুষ্টি মোকাবিলায় বাংলাদেশ দারুণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। স্ট্যান্টিং ২০১৩ সালের ৪২ শতাংশ থেকে কমে ২০১৯ সালে ২৮ শতাংশে হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫০ লাখের বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
দীর্ঘস্থায়ী বা ঘনঘন পুষ্টিঘাটতির কারণে ‘স্ট্যান্টিং’ দেখা দেয় এবং স্ট্যান্টিংয়ের কারণে একটি শিশুর শরীর ও মস্তিষ্কের যে ক্ষতি হয় তা পূরণ করা যায় না। এটি প্রথমে স্কুলে এবং পরে কর্মক্ষেত্রে কাজের দক্ষতা কমিয়ে দেয় এবং শিশুদের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়।
‘ওয়েস্টিং’ হল পুষ্টির ঘাটতিজনিত অবস্থার একটি তীব্র রূপ, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। এর ফলে খাবারের অভাবে বা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় ওজন কমে যায়।
অতিদরিদ্র পরিবারগুলোতে জন্ম নেওয়া শিশুদের ‘স্ট্যান্টিং’ ও ‘ওয়েস্টিং’-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আর যখন বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় আঘাত হানে, তখন আগে থেকেই অরক্ষিত অবস্থায় থাকা এ শিশুদের জন্য ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসা অন্যতম মহৎ একটি উদ্যোগ। এ রমজানে ইউনিসেফ, বাংলাদেশের মানুষকে নিজ দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সহায়তায় ইউনিসেফের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।’
Leave a Reply